ক্রিকেট খেলার ১০ টি আউট ও ক্রিকেট খেলার আইন কানুন জানুন
ক্রিকেট খেলার উৎপত্তি ইংল্যান্ডে। ১৭০০ সাল থেকে প্রথমে একটা উইকেট পুঁতে কিছু নিয়মকানুনের মাধ্যমে খেলা শুরু হয়। প্রথম আইনকানুন তৈরি করে এমসিসি অর্থাৎ মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব।
পরে ক্রমান্বয়ে আইন-কানুনের পরিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমান পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। ক্রিকেট খেলার নিয়ন্ত্রকারী সর্বোচ্চ সংস্থার নাম হচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল বা আই.সি.সি (International cricket council)। আজ আমরা ক্রিকেট খেলার ১০ টি আউট ও ক্রিকেট খেলার আইন কানুন সম্পর্কে জানবো।
এটি ১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংস্থাই ক্রিকেট খেলার নিয়ম-কানুন প্রণয়ন ও নিয়ন্ত্রণ, প্রচার ও ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির দায়িত্ব পালন করে থাকে। ১০টি দেশ টেস্ট খেলায় অংশ নিতে পারে।
দেশগুলো হচ্ছে- ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশ। চলুন জেনে নেয়া যাক ক্রিকেট খেলার ১০ টি আউট ও ক্রিকেট খেলার আইন কানুন সম্পর্কে।
ক্রিকেট খেলার আইন কানুন
১। পিচ: যে জায়গায় ক্রিকেট খেলা হয় তাকে পিচ (pitch) বলে। ক্রিকেট খেলার পিচের দৈর্ঘ্য ২২ গজ (২০.১২ মিটার) এবং প্রস্থ ১০ ফুট (৩.০৫) মিটার।
২। উইকেট: পিচের দুই মাথায় তিনটি করে স্ট্যাম্প থাকে। স্ট্যাম্পের উচ্চতা ২৮", তিন স্ট্যাম্পের প্রস্থ ৯"। স্ট্যাম্পের মাথার উপর দুইটি বেল বসানো থাকে। বেলসহ স্ট্যাম্পের উচ্চতা ২৮২"।
৩। বোলিং ও পপিং ক্রিজ: উইকেটের সাথে একই রেখায় বোলিং ক্রিজ হবে যার দৈর্ঘ্য ৮ ফুট ৮ ইঞ্চি (২.৬৪ মিটার)। বোলিং ক্রিজের সামনে ৪ ফুট (১.২২ মিটার) সমান্তরালভাবে টানা হবে পপিং ক্রিজ। বোলিং ক্রিজ থেকেই বিপক্ষ ব্যাটসম্যানকে বল করা হয়।
৪। ক্রিকেট মাঠ: স্ট্যাম্পের মাঝখান থেকে কমপক্ষে ৬০ গজ থেকে ৭৫ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে পরস্পর বিপরীত দিক হতে দুটি অর্ধবৃত্তচাপ আঁকতে হবে, পরে দুই দাগের মাথা সোজা করে রেখা দ্বারা সংযোগ করে দিলেই বাউন্ডারি লাইন হয়ে যাবে। একে ওভাল সাইজ মাঠ বলে। আবার পিচের মাঝখান থেকে ৬০-৭৫ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে বাউন্ডারি লাইন টানা যায়, একে রাউন্ড সাইজ মাঠ বলে।
৫। খেলোয়াড়: ১৬ জন খেলোয়াড় নিয়ে দল গঠন করা হয়। এদের মধ্যে ১১ জন মাঠে খেলায় অংশগ্রহণ করে। একজন দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে থাকে। দ্বাদশ খেলোয়াড় শুধু ফিল্ডিং করতে পারে।
৬। বল: বলের ওজন ৫.৫০-৫.৭৫ আউন্স, পরিধি ২২.০৪ থেকে ২২.০৯ সেন্টিমিটার এর বেশি হবে না।
৭। ব্যাট: ব্যাটের দৈর্ঘ্য ৩৮ ইঞ্চির বেশি নয়, প্রস্থ ৪ ইঞ্চির বেশি হবে না।
৮। ওভার: ৬টি শুদ্ধ বলে এক ওভার হয়।
৯। বাউন্ডারি: ব্যাটে লেগে বল মাটি স্পর্শ করে যখন বাউন্ডারি রেখা অতিক্রম করে তাকে বাউন্ডারি বলে। বাউন্ডারি হলে ব্যাটসম্যানের নামে ৪ রান যোগ হয়।
১০। ওভার বাউন্ডারি: ব্যাটের আঘাতে বল যখন শূন্যে দিয়ে বাউন্ডারি রেখা অতিক্রম করে তখন তাকে ওভার বাউন্ডারি বলে। ওভার বাউন্ডারি হলে ব্যাটসম্যানের নামে ৬ রান যোগ হয়। বল বাউন্ডারি রেখা স্পর্শ করলেও ওভার বাউন্ডারি হিসেবে গণ্য হবে।
১১। বাই রান: ব্যাটসম্যানের শরীর বা ব্যাটে না লেগে যদি বল দূরে যায় ঐ সময় ব্যাটসম্যান যদি রান নেয় তাকে বাই রান বলে।
১২। লেগ বাই রান: ব্যাটসম্যানের শরীরে লেগে যদি বল দূরে যায় ঐ সময় যদি ব্যাটসম্যান রান নেয় তাকে লেগ বাই রান বলে।
১৩। নো বল: বোলার নিয়ম মাফিক বল না করলে নো-বল হয়। নোবল হলে বিপক্ষদলের স্কোরে এক রান যুক্ত এবং ব্যাটসম্যান ফ্রি হিটা পায়।
১৪। ওয়াইড বল: বল ব্যাটসম্যানের খেলার নাগালের বাইরে দিয়ে গেলে ওয়াইড বল হয়। একদিনের ক্রিকেট খেলায় মিডল স্টাম্প থেকে অফের দিকে ৩৮ ইঞ্চি এবং লেগ স্টাম্পের সামান্য বাইরে দিয়ে গেলেই বলটি ওয়াইড হবে। এই ছিল ক্রিকেট খেলার আইন কানুন।
একজন ব্যাটসম্যান কী কী কারণে আউট হয় - ক্রিকেট খেলার ১০ টি আউট
১৫। রান আউট: ক্রিকেট খেলার ১০ টি আউট এরমধ্যে রান আউট অন্যতম। রান নেয়ার সময় ব্যাটসম্যান যদি ক্রিজে পৌঁছার আগেই ফিল্ডারগণ বল দ্বারা বেল ফেলে দেয় তখন ব্যাটসম্যান রান আউট হয়।
১৬। এল.বি.ডব্লিউ: আম্পায়ার যদি মনে করেন বল ব্যাটসম্যানের পায়ে না লাগলে অবশ্যই উইকেটে লাগত তখন আম্পায়ার ফিল্ডারদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঐ ব্যাটসম্যানকে আউট দিবেন।
১৭। বোল্ড আউট: বোলারের বল সরাসরি বা ব্যাটের আঘাতে স্ট্যাম্পে লেগে বেল পড়ে যায় তাহলে ব্যাটসম্যান আউট হবে।
১৮। কট আউট: ব্যাটসম্যান বল মারার পর শূন্যে থাকা অবস্থায় ফিল্ডারগণ বল ধরে ফেললে তখন ঐ ব্যাটসম্যান কট আউট হবে।
১৯। স্ট্যাম্পড আউট: ব্যাটসম্যান বল খেলার জন্য ক্রিজ ছেড়ে বাইরে গেলে ঐ সময় যদি উইকেট কিপার বল ধরে বেল ফেলে দেয় তাহলে ব্যাটসম্যান স্টাম্পড আউট হবে।
২০। টাইমড আউট: ক্রিকেট খেলায় খুব কম প্রয়োগকৃত আউট হচ্ছে টাইম আউট। ক্রিকেট খেলার ১০ টি আউট এরমধ্যে টাইমড আউট অন্যতম। একজন ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার পর নতুন ব্যাটসম্যান গার্ড নিতে ৩ মিনিটের বেশি সময় নেয় তখন ঐ ব্যাটসম্যান টাইমড আউটের আওতায় পড়বে। টি টোয়েন্টি খেলায় এই সময় ১২ মিনিট।
২১। হিট উইকেট আউট: ব্যাটসম্যান বল খেলার সময় যদি শরীর বা পোশাকে লেগে বেল পড়ে যায় তখন ব্যাটসম্যান হিট উইকেট আউট হবে।
২২। হিট দ্য বল টোয়াইস: ব্যাটসম্যানের ব্যাটে বা শরীরে বল একবার লাগার পর ব্যাটসম্যান নিজের উইকেট রক্ষার জন্য দ্বিতীয়বার বলে আঘাত করলে বা খেললে আবেদনের প্রেক্ষিতে এই আউটের আওতায় পড়বে।
২৩। হ্যান্ডেল দ্য বল আউট: ব্যাটসম্যান ইচ্ছাকৃতভাবে হাত দিয়ে বল ধরলে বা খেললে ঐ ব্যাটসম্যান আউট হবে।
২৪। অবস্ট্রাকটিং দ্যা ফিল্ড আউট: ব্যাটসম্যান ইচ্ছাকৃতভাবে ফিল্ডারদের বল ধরতে বাধা প্রদান করলে ঐ ব্যাটসম্যান আউট হবে। এই ছিল ক্রিকেট খেলার ১০ টি আউট।
লেখকের মন্তব্য
আজ আমরা ক্রিকেট খেলার ১০ টি আউট ও ক্রিকেট খেলার আইন কানুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। যদি আপনাদের আরো কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তবে নিচে কমেন্ট অপশনে আপনাদের মন্তব্য জানিয়ে দিন। আশা করি এখন আপনারা ক্রিকেট খেলার ১০ টি আউট ও ক্রিকেট খেলার আইন কানুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আপনি এই পোস্ট থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন তবে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
কমেন্ট করুন
comment url