সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা কত শতাংশ?
বাংলাদেশের সরকারি সকল চাকরি দপ্তর বা স্বায়ত্তশাসিত অথবা অর্ধস্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং কর্পোরেশন এর চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের ঘোষনা আসে ২০১৮ সালে। ২০২৪ সালের ৫ জুনে এসে উক্ত পরিপত্র বাতিল ঘোষনা করেন হাইকোর্ট। বলা বাহুল্য ২০১৮ সালে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের সকল চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা হয়েছিল।
এই গ্রেড গুলো ব্যতীত অন্য সকল গ্রেডে সাধারন কোটা পদ্ধতি বহাল ছিল। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রাণালয় উপরোক্ত সকল প্রতিষ্ঠানে সরাসরি নিয়োগ এর ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি পরিবর্তন করে পরিপত্র জারি করে। এই পরিপত্রে বাকি শ্রেণীর পদে সাধারন কোটা পদ্ধতি চালু ছিল। আজকে আমরা আলোচনা করব সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা কত শতাংশ? এই বিষয় নিয়ে।সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা কত শতাংশ? জানতে আমাদের সাতগেই থাকুন।
ভূমিকা
মহান মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ১৯৭২ সালে একটি নির্বাহী আদেশে বলা হয় দেশের বিভিন্ন সরকারি অথবা আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান এ নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকবে। এবং নারীদের জন্য থাকবে ১০ শতাংশ কোটা।
এর পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে এই কোটা পদ্ধতিতে পরিবর্তন, সংশোধন ও পরিমার্জন করা হয়েছে। তবে ২০১৮ সালে কোটা আন্দোলন হলে এবনিয়মে ব্যপক পরিবর্তন আসে। সাধারন মানুষের কাছে কোটা সংস্কার যুক্তিযুক্ত মনে হলেও অনেক মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কাছে এটি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অসম্মান বলে মনে করছেন তারা। এরই প্রেক্ষিতে হাইকোর্টে রিট করে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তারই শুনানিতে ৫ জুন ২০২৪ এ হাইকোর্ট কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল করেন।
চলুন আজ জেনে নেয়া যাক সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা কত শতাংশ? এর সম্পর্কে।
কোটা কি?
কোটা হলো কোনো নিয়োগে কোনো বিশেষ জনগোষ্ঠী, ব্যক্তি বা জাতি কে বিশেষ সুবিধা প্রদান এর লক্ষ্যে আসন, পদ ইত্যাদি সংরক্ষিত রাখা।
আমাদের দেশে চাকরি, খেলা, শিক্ষা ইত্যাদিতে এমন সুবিধা চালু রয়েছে। আমাদের দেশে প্রচলিত কোটা গুলো হলো- মুক্তিযোদ্ধা কোটা, নারী কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা, ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী কোটা, জেলা কোটা ইত্যাদি।
কোটা আন্দোলন কি?
সালটি ২০১৮। সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা সংস্কার করার লক্ষ্যে আন্দোলনে নামে হাজারো শিক্ষার্থী। আন্দোলনের এক পর্যায়ে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর দ্বিতীয় শ্রেনির সকল ধরনের চাকরি হতে কোটা পদ্ধতি তুলে নেয়া হয়। তখন পরিপত্রে জারি করা হয় নবম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেড এর সকল পদে সরাসরি নিয়গের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি বাতিল।
যদিও ভুল করে ৮ম গ্রেড ও তার উপরের পদের কর্মরতদের বিষয়ে কোনো বক্তব্য উক্ত পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়নি। তবে ৮ম গ্রেডেও সরকয়ারি কর্ম কমিশন সরাসরি নিয়োগ দিয়ে থাকেন। ততকালীন সময়ে মন্ত্রীসভার বৈঠকে ৯ম থেকে ১৩তম পদের সকল জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল ধরনের কোটা বাতিল করার ঘোষনা করা হয়। এমন কি এই ঘোষনার পর পূনরায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করে।
বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে বেতন এর কাঠামোর উপর নির্ভর করে মোট ২০টি গ্রেডে ভাগ করা হয়েছে। ১ম গ্রেডে আছেন সচিবরা। এবং ১ম বা ২য় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের চাকুরেরা। নবম গ্রেডে গেজেটেড ও নন গেজেটেড কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়ে থাকেন। কোটা আন্দোলনের পূর্বে ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা ১০% জেলা কোটা ১০% নারী কোটা ৫% ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কোটা ও ১% প্রতিবন্ধী কোটা নিয়ে মোট ৫৬% কোটার বিধান ছিল। যা বর্তমানে পুনর্বহাল করা হয়।
বাংলা ব্লকেড বা কোটা বিরোধী আন্দোলন
৭ জুলাই রবিবার রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন চলছে। আন্দোলনে অংশ নিয়েছে সারা দেশের হাজারো শিক্ষার্থী। কোটা বাতিল সহ চার দফার দাবি উত্থাপন করেছে শিক্ষার্থীরা। এই কর্মসূচির নাম দেয়া হয়েছে 'বাংলা ব্লকেড'।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার করার দাবি নিয়ে ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছিল। যার প্রেক্ষিতে ততকালীন সরকার কোটা পদ্ধতি বাতিল করেন। পরে ২০২১ সালে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে রিট করে। তারই অরেক্ষিতে ৫ জুন এক রায়ের মাধ্যমে হাইকোর্ট পূনরায় কোটা ব্যবস্থা বহাল করেন।
৭ জুলাই রবিবার আওয়ামিলীগ এর সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান " শিক্ষার্থীরা যেইস্যুতে আন্দোলন করছে সেইটা তো সরকারি সিদ্ধান্ত বরং আদালত ভিন্ন রায় দিয়েছেন। আমরা তো সিদ্ধান্ত দিইনি, দিয়েছেন আদালত।"
এমতাবস্থায় শিক্ষার্থী সরকারকেই দায়ী সাব্যস্ত করছে। তাদের ধারনা আদালতকে প্রভাবিত করে সরকার এমন বাস্তবায়িত করছে। তাই তারা শাহাবাগে একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল, স্লোগান দিচ্ছে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির কারনে রাজধানীর অবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট বন্ধ থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এইদিকে রাজশাহীর সাথে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
সরকারি চাকরিতে কোটা কত?
সাধারণত সরকারি সকল চাকরিতে কোটা রয়েছে। তবে একেক চাকরির ক্ষেত্রে একেক পরিমান কোটা বিদ্যমান। পিএসসি এর চাকরি গুলোর ক্ষেত্রে প্রায় ৫৬ শতাংশ কোটা বিদ্যমান। আবার প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মহিলা ৬০ শতাংশ, পোষ্য ২০ শতাংশ ও পুরুষ ২০ শতাংশ কোটা বিদ্যমান আছে। এর মধ্যে আবার এর মধ্য হতে প্রতিবন্ধী ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৫ শতাংশ ও আনসার ভিডিপি ১০ শতাংশ।
প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক নিয়োগ এ কোটা বিভাজন ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ এর ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি কেমন হবে তা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।
তারা জানিয়েছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০১৩ অনুযায়ী কোনো একটি উপজেলার মোট পদের ৬০% মহিলা, ২০% পোষ্য এবং ২০% পুরুষ কোটা নির্ধারন থাকে[বিধি ৭।(১)(ক)]। উক্ত বিধিমালার বিধি ৭।(২) এর ভাষ্য নিম্নরুপ: "উপবিধি (১) এ উল্লেখিত মহিলা, পোষ্য ও পুরুষ কোটা পূরনের ক্ষেত্রে, আপাতত: বলবৎ অন্য কোনো বিধি বা সরকারি সিদ্ধান্তে কোন বিশেষ শ্রেনীর কোটা নির্ধারিত থাকিলে সেই কোটা সংক্রান্ত বিধান অনুযায়ী নিয়োগ করিতে হইবে।"
বিধি ৭(২) এর নির্দেশনা মতে মহিলা, পোষ্য ও পুরুষ প্রতিটি কোটা আবার সংস্থাপন মন্ত্রণালয় এর ১৭/০৩/১৯৯৭ তারিখের সম(বিধি-১)-এস-৮/৯৫(অংশ-১)-৫৬(৫০০) নম্বর পরিপত্র অনুসারে ৪টি বিশেষ শ্রেনীর কোটা ও সাধারন মেধায় বিভক্ত। বিশেষ শ্রেণীর কোটাগুলো হলো: এতিমখানা নিবাসী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ১০%; মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ৩০%; ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৫% এবং আনসার ভিডিপি সদস্য ১০%। অবশিষ্ট ৪৫% পদ মহিলা, পোষ্য ও পুরুষ প্রার্থীদের মধ্যে হতে একই শ্রেণির সাধারন মেধাক্রমানুসারে পূরন করা হয়।
এই বিজ্ঞপ্তি তে আরো জানানো হয়,
এবারের শিক্ষক নিয়োগ পরিক্ষার ফল বিশ্লেষন করে দেখা যায় যে, বিভিন্ন বিশেষ শ্রেনীর কোটায় নির্বাচনযোগ্য উপযুক্ত প্রার্থী না পাওয়ায় শূন্যপদসমূহ সাধারন প্রার্থীদের দ্বারা পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে মেধাক্রমানুসারে পূরন করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় বিধিসম্মতভাবেই কিছু উপজেলা/থানায় নির্বাচিত পুরুষ প্রার্থীর সংখ্যা নির্বাচিত মহিলা প্রার্থীর চেয়ে তুলনামূলক ভাবে বেশি হয়েছে। উল্লেখ্য, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরিক্ষা ২০১৮ এর প্রকাশিত চূড়ান্ত ফলাফল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিগরি সহায়তায় উন্নত সফটওয়্যার এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে প্রক্রিয়াকরণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মানবীয় হস্তক্ষেপ এর কোন সুযোগ ছিল না।
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা কত %
বাংলাদেশের বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রে কোটার পরিমাণ একেক রকম। তবে প্রত্যেক চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার পরিমাণ প্রায় কাছাকাছি। যেমন, পিএসসির চাকরি গুলোতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার পরিমাণ প্রায় ৩৫% পর্যন্ত। অন্যদিকে অধিদপ্তরের বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটার পরিমান ৩০% পর্যন্ত। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকেই মুক্তিযোদ্ধার পরিবার এর জন্য রাষ্ট্র বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা রেখেছে।
লেখকের মন্তব্য
আজকে আমরা সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা কত শতাংশ এর বিস্তারিত জানলাম। যদি আপনাদের আরো কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তবে নিচে কমেন্ট অপশনে আপনাদের মন্তব্য জানিয়ে দিন। আশা করি এখন আপনারা বুঝতে পেরেছেন যে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা কত শতাংশ? যদি আপনি এই পোস্ট থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন তবে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
কমেন্ট করুন
comment url