বাংলা ভাষায় ণ-ত্ব বিধান এর নিয়ম জানুন

পৃথিবীর সমৃদ্ধ ভাষা গুলোর মধ্যে বাংলা ভাষা অন্যতম। অথচ বেশ কতকগুলো শব্দের বানান নানাজনকে নানারকম ভাবে লিখতে দেখা যায়। তাই বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে সঠিক ও নির্ভুলভাবে লেখার জন্য বাংলা বানানের নিয়ম জানা অত্যাবশ্যক। আজকে আমরা বাংলা একাডেমি প্রণীত বাংলা বানান এর নিয়ম জানব এবং বাংলা ভাষায় ণ-ত্ব বিধান এর নিয়ম জানব।
বাংলা ভাষায় ণ-ত্ব বিধান এর নিয়ম জানুন


ভুমিকা

বাংলা ভাষা তৎসম, অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। এর মধ্যে তৎসম অর্থাৎ সংস্কৃত শব্দের বানান গুলো সুনির্দিষ্ট নিয়মের অধীন।বিদেশি শব্দের বানানে নানা রকম পরিবর্তন দেখা যায়। ভাষায় কোনো মতেই একটি শব্দের একাধিক বানান হওয়া উচিত নয়। বানান একরকম না হলে ভাষার সৌন্দর্য নষ্ট হয়, তেমন অর্থ গ্রহনেও জটিলতা দেখা দেয়। এসব অসুবিধা দূরীকরণের জন্য বাংলা বানান এর নিয়ম সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। আজ আমরা বাংলা একাডেমি প্রণীত বাংলা বানান এর নিয়ম জানব এবং বাংলা ভাষায় ণ-ত্ব বিধান এর নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব।

বাংলা একাডেমি প্রণীত বাংলা বানান এর নিয়ম

বাংলা একাডেমি প্রনীত প্রমিত বানান ও আধুনিক বাংলা বানানের নিয়ম নিচে আলোচনা করা হলো:

  • সকল অসংস্কৃত শব্দের বানানে সবসময় ই-কার হবে। যেমন: 
তদ্ভব: পাখি, বাঁশি, হাতি, শিউলি, মাছি ইত্যাদি।
অর্ধ-তৎসম: রাত্তির, ছিরি, গিন্নি, কুৎসিত ইত্যাদি।
দেশি: ঘুড়ি, বুড়ি, ঢিল, ঝিঙা, ঢেঁকি, ডিঙি ইত্যাদি।
বিদেশি: দুনিয়া, খলিফা, মিছিল, কামিজ, গরিব, অফিস, পেনসিল, টেবিল, ডিগ্রি ইত্যাদি।
  • অতৎসম শব্দের শেষে বিশেষনবাচক 'ই' প্রত্যয় যুক্ত হলে শব্দের শেষে ই-কার ব্যবহার হয়। যেমন: রেশমি, গোলামি, কয়েদি, কারবারি, চালাকি, দরকারি ইত্যাদি।
  • ক খ গ ঘ এবং ক্ষ এর পূর্বে নাসিক্য বর্ণ যুক্তকরণের জন্য সর্বত্র ঙ লিখতে হবে। যেমন: ব্যঙ্গ, আকাঙ্ক্ষা, অঙ্ক ইত্যাদি।
  • ভাষা ও জাতির নামের ক্ষেত্রে ই-কার হয়। যেমন: জাপানি, বাঙালি, ইরানি, আরবি, ইরাকি, জার্মানি ইত্যাদি।
  • রেফের পর কোথাও ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন: ধর্ম, কর্ম, কার্য, শর্ত ইত্যাদি।
  • পদের অন্তে বিসর্গ হবে না। যেমন: মূলত, বশত, প্রথমত ইত্যাদি।
এই ছিল বাংলা একাডেমি প্রণীত বাংলা বানান এর কিছু নিয়ম। এই নিয়ম গুলো না জানা থাকলে বাংলা বানানে অনেক ভুল হতে পারে। এখন আমরা বাংলা ভাষায় ণ-ত্ব বিধান এর নিয়ম সম্পর্কে জানব।

বাংলা ভাষায় ণ-ত্ব বিধান এর নিয়ম

বাংলা ভাষার শব্দে দন্ত-ন এর মূর্ধন্য ণ- তে পরিবর্তন লাভের বিধানগুলোকে বলে ণ-ত্ব বিধান। এ বিধান গুলো নিচে উদাহরন সহ আলোচনা করা হলো। ণ-ত্ব বিধানের নিয়মঃ
  • ঋ, র ও ষ-কারের পর দন্ত্য 'ন' এর স্থানে মূর্ধণ্য হয়। যেমন: ঋণ, ঘৃণা, তৃণ, রণ, মরণ, বর্ণ, ভীষণ, কৃষাণ, তীক্ষ্ণ প্রভৃতি।
  • একই পদস্থিত ঋ, র, ষ এর পরে স্বরবর্ণ, ক-বর্গ, প-বর্গ ব, য, ক, হ, ঙ ব্যবধান থাকলেও এদের পরে 'ণ' হয়। যেমন: রোপণ, দর্পণ, প্রণালি, হরিণ, পাষাণ, প্রস্রবণ, ব্রাহ্মণ প্রভৃতি।
  • ট-বর্গ অর্থাৎ ট, ঠ, ড, ঢ এর পূর্বে দন্ত 'ন' থাকলে তা মূর্ধন্য 'ণ' হয়ে যায়। যেমন: কণ্টক, বণ্টন, লুণ্ঠন, ভণ্ড, ভাণ্ড, খণ্ড, দণ্ড ইত্যাদি।
  • প্র, পরা, পরি, নির- এই চারটি উপসর্গ ও 'অন্তর' শব্দের প্রস্থিত নম, নদ, নহ, নী, অস, হন এ কয়টি ধাতুর দন্ত্য 'ন' পরিবর্তিত হয়ে মূর্ধন্য 'ণ' হয়। যেমন: প্রণাম, প্রণতি, প্রণত, প্রাণ, প্রহরণ, প্রণব, পরিণয়, পরায়ণ, প্রণোদিত, প্রণিধান, প্রণিপাত ইত্যাদি।
  • সমাস সত্ত্বেও কতক গুলো পদের দন্ত্য 'ন' পরিবর্তিত হয়ে মূর্ধন্য 'ণ' হয়। যেমন: পরাহ্ণ, অপরাহ্ণ, চন্দ্রায়ণ, নারায়ণ, অগ্রহায়ণ ইত্যাদি।
  • বাংলা প্রচলিত কতগুলো শব্দে স্বাভাবিক ভাবেই মূর্ধন্য 'ণ' ব্যবহৃত হয়। যেমন: শোণিত, মণি, বেণু, বীণা, গণনা ইত্যাদি।
এই ছিল বাংলা ভাষায় ণ-ত্ব বিধান এর নিয়ম নিয়ে আলোচনা। সঠিক বানান জানতে অবশ্যই ণ-ত্ব বিধান ভালভাবে জানা প্রয়োজন।

লেখকের মন্তব্য

আজকে আমরা বাংলা একাডেমি প্রণীত বাংলা বানান এর নিয়ম এবং বাংলা ভাষায় ণ-ত্ব বিধান এর নিয়ম জানলাম। যদি আপনাদের আরো কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তবে নিচে কমেন্ট অপশনে আপনাদের মন্তব্য জানিয়ে দিন। আশা করি এখন আপনারা বুঝতে পেরেছেন বাংলা একাডেমি প্রণীত বাংলা বানান এর নিয়ম এবং বাংলা ভাষায় ণ-ত্ব বিধান এর নিয়ম সম্পর্কে। যদি আপনি এই পোস্ট থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন তবে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কমেন্ট করুন

comment url