মশার কামড়ে কি কি রোগ হয় ? মশার কামড় থেকে বাঁচার ১২ টি উপায়
কোন পতঙ্গটির অত্যাচারে আপনার জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এমন প্রশ্ন যদি করা হয় তবে নিশ্চয় সবার আগে নাম আসবে মশার। যন্ত্রনাদায়ক এক পতঙ্গের নাম মশা।
ভূমিকা
শুধু উপদ্রবে এর কাজ শেষ তা নয়। নানান ধরনের রোগের কারনও এই মশা। এই রোগ গুলোর কারনে প্রতি বছর মৃত্যুর সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। মশা বহন করে চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, ফাইলেরিয়া, পীত জ্বর, জিকা ভাইরাস এর মত মারত্মক সব জীবানু।
কয়েল, স্প্রে, এরোসল, গুডনাইট এর মত যত কিছু দিয়েই মশা তাড়ানো হোক না কেনো তা আবার উপদ্রব করতে চলে আসে। আর এগুলো ব্যবহার করলে স্বাস্থ ঝুঁকিও থাকে। আমাদের চেষ্টা করতে হবে এমন জিনিস গুলোর উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে কিভাবে মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়া যায় তার ব্যবস্থা করা।
আজ আমরা মশার কামড়ে কি কি রোগ হয় ? মশার কামড় থেকে বাঁচার ১২ টি উপায় সম্পর্কে জানব।
মশার কামড়ে কি কি রোগ হয়
- ডেঙ্গু জ্বর: ডেঙ্গু জ্বর মশার কামড়ে হয়ে থাকে। এডিস মশা এর বাহক। এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গুর ভাইরাস ৩ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে শরিরে উপসর্গ প্রকাশ করে। উপসর্গের মধ্যে আছে মাথা ব্যাথা, মাংস পেশি ও গিটে ব্যাথা, মারাত্মক জ্বর এবং শরিরে ফুসকুড়ি।
- ম্যালেরিয়া: এনোফিলিস মশার দ্বারা ম্যালেরিয়া রোগ হয়ে থাকে। ম্যালেরিয়ার জীবানু আমাদের রক্তে বংশবৃদ্ধি করে থাকে। এর ফলে আমাদের শরিরে রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয়। মারাত্মক কাঁপুনি দিয়ে জ্বর,বমি এবং শীত দিয়ে জ্বর আসে।
- চিকুনগুনিয়া: ডেঙ্গুর মত চিকুনগুনিয়াও এডিস মশার মাধ্যমে হয়ে থাকে। চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস শরিরে প্রবেশ করলে তীব্র জ্বর, জয়েন্টে জয়েন্টে মারাত্মক ব্যাথা ও দুর্বলতা দেখা দেয়।
- ফাইলেরিয়াসিস: ফাইলেরিয়াসিস বা গোদ রোগ হলো ফাইলেরিয়া নামক গোল কৃমি দ্বারা সংঘটিত রোগ। মানব দেহে এই গোলকৃমি বংশবিস্তার করে অসংখ্য মাইক্রোফাইলেরিয়ার জন্ম হয়। মশার রক্ত খাওয়ার পরে এই কৃমি অন্য মানুষের শরিরে প্রবেশ করে। এভাবে এই রোগ একজন থেকে অরেকজনের হতে পারে।
- ফাইলেরিয়া মানুষের লসিকা নালী ও গ্রন্থিতে বাসা বাঁধে। যার ফলে লসিকায় প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। যার কারনে শরিরের আক্রান্ত স্থান অস্বাভাবিক ফুলে যায়। ফুলে যাওয়া এই অবস্থাকে ফাইলেরিয়াসিস বা গোদরোগ বলে।
মশার কামড় থেকে বাঁচার ১২ টি উপায়
- জমে থাকা পানি পরিস্কার করুন:
জমে থাকা পানিতে মশা সহজেই বংশ বিস্তার করতে পারে যদি আপনার বাসার কোনো স্থানে আনি জমে তগাকে তাহলে আজই তা পরিস্কার করুন। ঘরের সবটুকু পরিস্কার রাখুন। স্যাতস্যাতে যায়গা গুলো শুকনো রাখার চেষ্টা করুন। বাথরুম,ঘরের কোথাও অহেতুক পানি রাখবেন না। কাজ শেষে পানি ফেলে দিন। অব্যবহৃত টব গুলো উল্টো করে রাখবেন।
- কর্পূর:
মশা তাড়ানোর কার্যকরী উপায় হতে পারে কর্পূর। সন্ধ্যা হবার আগে কয়েকটি কর্পূর এর টুকরো আগুনে জ্বালিয়ে দিন। এ সময় দরজা জানালা বন্ধ রাখুন। এর পর দরজা খুললেও মশা ঢুকবে না।
- নিমপাতার ব্যবহার:
আমরা অনেক সময় ধুনো জ্বালি। ধুনোর সাথে নিমপাতার গুড়ো ব্যবহার করলে মশা দূরে থাকবে।
- পিপারমেন্ট ওয়েল:
বাজারে একধরনের পিপারমেন্ট ওয়েকযুক্ত মোম পাওয়া যায়। এতে সুগন্ধি রয়েছে। আর সুগন্ধি হলো মশার যন্ত্রনার কারন। এছাড়াও এই তেল শরিরে মাখতে পারবেন। অবশ্যই নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে গায়ে মাখবেন।
- লেমন ইউক্যালিপটাস তেল:
লেমন ইউক্যালিপটাস তেল ব্যবহারে মশা পালাবে। আমেরিকার CDC একে মশা তাড়ানোর ভাল উপায় হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে এটি ব্যবহার করুন।
- ক্যাট নিপ অয়েল:
পোষা বিড়ালের গায়ে ব্যবহারকৃত তেলটির নাম হয়তো অনেকেই শুনেছেন। এই তেল শুধু বিড়ালের জন্য উপকারী তা নয় বরং মশা তাড়াতেও বেশ কার্যকরী।
- সুগন্ধি ব্যবহার:
আমাদের শরীর থেকে প্রতিনিয়ত কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়। এর ফলে শরীরে গন্ধ হওয়াটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। মশা এই গন্ধ খুঁজে পেতে খুব পারদর্শী। মশা এই গন্ধ টের পেয়ে খাদ্যের সন্ধান করতে পারে। তবে সুগন্ধি ব্যবহার করলে ঠিক এর বিপরীতটি ঘটে। বাজারের যে কোনো সুগন্ধি ব্যবহারে আপনি মশার হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন। বিশেষ করে ল্যাভেন্ডার, ইউক্যালিপটাস, লেমনগ্রাস এবং পিপারমিন্টেড় গন্ধ মশা একদম সহ্য করতে পারে না। বসবাসের স্থানে সুগন্ধি ব্যবহার করলে মশা সে স্থান হতে দূরে থাকবে। এছাড়াও রাতে সুগন্ধি মোমবাতি জ্বলালে ঘুমের মধ্যে মশা থেকে বাঁচতে পারেন।
- ঘরের রঙ পরিবর্তন:
মশার খুব পছন্দের রঙ হচ্ছে কালো, নেভি ব্লু,লাল,কমলা ইত্যাদি। তবে উজ্জ্বল রঙ মশা খুব অপছন্দ করে। তাই ঘরের রঙ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে অবশ্যই উজ্জ্বল রঙ নির্বাচন করুন। যেমন: উজ্জ্বল সবুজ,উজ্জ্বল নীল, সাদা অথবা উজ্জ্বল কোনো রঙ।
- ঘুমানোর আগে গোসল:
সাধারনত মানুষের শরীরের গন্ধ মশা খুব ভালভাবেই চিনতে পারে। আর এই গন্ধ মশা খুব পছন্দও করে বটে। তাই ঘুমানোর পূর্বে গোসল করলে শরীর পরিস্কার ও গন্ধমুক্ত থাকবে। এর ফলে মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
- গাছ রাখুন:
এমন কিছু গাছ আছে যেগুলো মশার আগমন কমায়। বিশেষ করে পুদিনা,রোজমেরি ও তুলসী গাছ থাকলে মশার আনাগোনা কমে যায়। তাই শোবার ঘরে এমন কিছু গাছ টবে করে রাখার চেষ্টা করুন।
- জানালায় জাল লাগান:
আমাদের বাসার চারপাশে অনেক ঝোপঝাড়, ময়লা আবর্জনা থাকে যার কারনে মশা সহজেই বংশ বিস্তার করতে পারে। অনেক সময় আমরা সেগুলো পরিস্কার করতে পারি না অথবা হয়ে উঠে না। এর ফলে বাইরের মশা গুলো সময় মত আপনার বাসার ভিতরে এসে উপস্থিত হয়। এমন অবস্থায় বাসার সকল জানালায় নেট লাগাতে পারেন। তাহলে মশা কেনো আরো অন্যান্য ক্ষতিকর পোকামাকড় ও ঘরে প্রবেশ করতে পারবে না।
- মশারি টানুন:
ঘুম পেলে মানুষের আর কিছুই খেয়াল থাকে না। মশারি টানার কথা তো আরো নয়। এমনকি সবচেয়ে বিরক্তিকর কাজ গুলোর তালিকায় হয়তো ভালভাবেই মশারি টানা স্থান করে নিবে। তবে মশারি না টেনে ঘুমালে আপনার ঘুম বিঘ্নিত হতে পারে। তাই কষ্ট হলেও মশারি টানতে ভুলবেন না।
লেখকের মন্তব্য
আজকে আমরা মশা বাহিত রোগ এবং এর থেকে বাঁচার ১২ টি উপায় এর বিস্তারিত জানলাম। যদি আপনাদের আরো কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তবে নিচে কমেন্ট অপশনে আপনাদের মন্তব্য জানিয়ে দিন। আশা করি এখন আপনারা বুঝতে পেরেছেন মশার কামড়ে কি কি রোগ হয় এবং মশার কামড় থেকে বাঁচার ১২ টি উপায় সম্পর্কে । যদি আপনি এই পোস্ট থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন তবে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
কমেন্ট করুন
comment url