হার্টের সমস্যা হলে কি কি লক্ষণ দেখা দেয়? হার্ট অ্যাটাক যে কারণে হতে পারে
বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক অবস্থার প্রেক্ষিতে মানুষের হৃদপিন্ডে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসব সমস্যার মধ্যে বুকে ব্যথা, হার্ট অ্যাটাক ও হার্ট ফেলিওর অন্যতম।
ভূমিকা
রক্ত সংবহন তন্ত্রের যে অঙ্গটি পাম্পের মতো সংকোচন প্রসারণ এর মাধ্যমে সারা দেহে রক্ত সংবহন করে সেটি হৃৎপিণ্ড। রক্তকে রক্তবাহিকার ভেতর দিয়ে সঞ্চালনের জন্য হৃৎপিণ্ড বা হার্ট মানব দেহের পাম যন্ত্র রূপে কাজ করে। জীবন্ত এ পাম্প যন্ত্রটি এর বিভিন্ন অংশ থেকে শিরার মাধ্যমে রক্ত নিয়ে আসে এবং ধমনীর সাহায্যে শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে দেয়।
একজন সুস্থ মানুষের জীবদ্দশায় হৃৎপিণ্ড বা হার্ট গড়ে ২৬০০ মিলিয়ন বার স্পন্দিত হয়ে থাকে। এ সময় প্রতিটি ভেন্ট্রিকল বা নিলয় থেকে প্রায় ১৫৫ মিলিয়ন লিটার বা দেড় লক্ষ টন রক্ত বের করে দেয়। একটি হৃৎপিণ্ডের ওজন প্রায় ৩০০ গ্রাম হয়ে থাকে। তবে স্ত্রীলোকের হৃদপিণ্ডের ওজন পুরুষের চেয়ে এক তৃতীয়াংশ কম হয়ে থাকে।
হৃদপিন্ডের কোন সমস্যা হলে আমাদের রক্ত সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে। এর মাধ্যমে আমাদের শরীরে নানা রকম রোগ হয়ে থাকে। এর কারণে বুকে ব্যথা, হার্ট অ্যাটাক ও হার্ট ফেলিওর হতে পারে। আজ আমরা হার্টের সমস্যা হলে কি কি লক্ষণ দেখা দেয় এবং হার্ট অ্যাটাক কি কি কারণে হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করব।
হার্ট অ্যাটাক (Heart Attack or Myocardial Infarction) যে কারণে হয়
হৃদপেশীর সুস্থতার জন্য ক্রমাগতভাবে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহ জরুরী। করোনারি ধমনীর মাধ্যমে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পেশীতে পৌঁছায়। চর্বি জাতীয় পদার্থ, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন প্রভৃতি প্রণালী ধমনীর অন্তর্গাত্রে জমা হয়ে বিভিন্ন আকৃতির প্লাক (plaques) গঠন করে। এতে করোনারি অ্যাথেরোমা (coronary atheroma) বলে।
প্লাকের বহির্ভাগ ক্রমান্বয়ে শক্ত হয়ে ওঠে। এভাবে প্লাক শক্ত হতে হতে যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছায় তখন এগুলো বিদীর্ণ হয়। অনুচক্রিকা জমা হয়ে প্লাকের চতুর্দিকে তখন রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। রক্ত জমাট বাঁধার কারণে করোনারি ধমনীর লুমেন বা গহ্বর সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।
এর ফলে হৃৎপেশীতে পুষ্টি ও অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলাফল হৃদপেশি ধ্বংস হয়ে যায় বা মরে যায় এবং হার্ট এটাকের মত মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। হার্ট অ্যাটাক এর অপর নাম মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন। মায়োকার্ডিয়াল অর্থ হৃৎপেশি এবং ইনফার্কশন অর্থ অক্সিজেনের অভাবে দম বন্ধ হওয়া।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণসমূহ
করোনারী ধমনীতে কোলেস্টেরল জাতীয় পদার্থ জমা হওয়া থেকে হার্ট এটাকে পরিসমাপ্তি হওয়া পর্যন্ত অনেক দিন অতিবাহিত হয়। এ সময়ের মধ্যে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যায়। এ লক্ষণ গুলোর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো-
- বুকে অস্বস্তি (chest-discomfort): বুকে ঠিক মাঝখানে অস্বস্তি হওয়া। এ অস্বস্তি কয়েক মিনিট থাকে চলে যায় আবার ফিরে আসে। বুকে অসহ্য চাপ, মোচড়ানো, আচড়ানো বা ব্যথা অনুভূত হয়।
- উর্ধাঙ্গের অন্যান্য অংশে অস্বস্তিঃ এক বা উভয় বাহু, পিঠ,গলা,চোয়াল বা পাকস্থলীর উপরে অংশে অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভব।
- ঘন ঘন নিশ্বাস প্রশ্বাসঃ বুকে অস্বস্তির সময় ঘন ঘন নিঃশ্বাস প্রশ্বাস ঘটে। অনেক সময় বুকে অস্বস্তি হওয়ার আগেও এমন অবস্থা দেখা দিতে পারে।
- বমি বমি ভাবঃ পাকস্থলীতে অস্বস্তির সঙ্গে বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, হঠাৎ মাথা ঝিমঝিম করা অথবা ঠান্ডা ঘাম বেরিয়ে যাওয়া।
- ঘুমে ব্যাঘাতঃ ঘুমে ব্যাঘাত ঘটা, নিজেকে শক্তিহীন বা শ্রান্ত অনুভব করা।
হার্ট অ্যাটাক এর প্রতিরোধ
- ঋতুকালীন টাটকা ফল ও সবজি খেতে হবে।
- চর্বি ও কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে।
- বডি মাস ইনডেক্স বা বি এম আই মেনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।
- সঠিক ওজন, রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম যেমন প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাটা ইত্যাদি করতে হবে।
- ধূমপায়ী হলে অবশ্যই ধূমপান ত্যাগ করতে হবে, ও অধূমপায়ী হলে ধূমপান না করার প্রতিজ্ঞা করতে হবে।
- জীবন অভ্যাসে অ্যালকোহল নিষিদ্ধ করে রাখতে হবে।
- কোলেস্টেরল, রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে বা বন্ধ করতে হবে।
- বছরে অন্তত একবার সম্ভব হলে দুইবার সমগ্র দেহ চেকাপের ব্যবস্থা করতে হবে।
আজকে আমরা হার্টের সমস্যা হলে কি কি লক্ষণ দেখা দেয়? হার্ট অ্যাটাক যে কারণে হতে পারে এর বিস্তারিত জানলাম। যদি আপনাদের আরো কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তবে নিচে কমেন্ট অপশনে আপনাদের মন্তব্য জানিয়ে দিন। আশা করি এখন আপনারা বুঝতে পেরেছেন হার্টের সমস্যা হলে কি কি লক্ষণ দেখা দেয়? হার্ট অ্যাটাক যে কারণে হতে পারে। যদি আপনি এই পোস্ট থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন তবে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
কমেন্ট করুন
comment url