টাইফয়েড কেন হয় বিস্তারিত জানুন
টাইফয়েড কেন হয় এ বিষয়ে অনেকেই অবগত নয়। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে টাইফয়েড হয়ে থাকে। সময়মতো চিকিৎসা না করানো হলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আজকে আলোচনা করব টাইফয়েড কেন হয়, লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে।
ভূমিকা
জ্বর আমাদের মাঝে মাঝেই হয়ে থাকে তবে এই জ্বরকে সাধারণভাবে নেয়া উচিত নয়। আসলে জ্বর হলো কোন রোগের উপসর্গ। যখন শারীরিক কোন ত্রুটি হয় অথবা শারীরিক কোন সমস্যা তৈরি হয় তখন জ্বর উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয়। তাই প্রথম অবস্থায় সব ধরনের জ্বরেই একই লক্ষণ দেখা দেয়।
এক্ষেত্রে জ্বরের মাত্রার উপর নির্ভর করে সংক্রমণের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া যায়। সাধারণত টাইফয়েড জ্বর যেকোনো সময় হতে পারে বিশেষ করে গরমকালে এটি বেশি হয়। টাইফয়েডের জীবাণু সাধারণত অনিরাপদ পানি এবং অনিরাপদ খাবারের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে।
আজ আমরা টাইফয়েড কেন হয়, লক্ষণ, চিকিৎসা বা এর প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব।
টাইফয়েড কেন হয় ?
টাইফয়েড কেন হয় আমাদের তা জানা জরুরী। টাইফয়েড সাধারণত পানির মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। দুই ধরনের ব্যাকটেরিয়া এই রোগের কারণ। ১) সালমোনিলা টাইফি ২) সালমোনিলা প্যারাটাইফি। এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনের ফলে টাইফয়েড জ্বর হয়ে থাকে যাকে মেডিকেলের ভাষায় এন্টেরিক ফিভার বলা হয়।
দূষিত পানি এবং নোংরা খাবার থেকে ব্যাকটেরিয়াগুলো শরীরে প্রবেশ করে। এরপর ব্যাকটেরিয়া গুলো খাবারের সাথে আমাদের অন্ত্রে প্রবেশ করে। বিশেষ করে যারা অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন থাকে তাদের টাইফয়েড হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আরও পড়ুন: জীবানু রোধে ভিনেগারের ব্যাবহার
নোংরা হাতের মাধ্যমেও টাইফয়েড এর জীবাণু ছড়াতে পারে। অনেক সময় আমরা বাইরের খাবার খেয়ে থাকি। বাইরের খাবারগুলো ঠান্ডা হয় এবং এতে বিভিন্ন ময়লা ও ধুলাবালি থাকে এমন খাবার গ্রহণের ফলে টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
টাইফয়েড এর লক্ষণ কি ?
টাইফয়েড এর লক্ষণ টাইফয়েড জীবাণু আক্রমণের সাথে সাথে জানা যায় না। রোগ জীবাণু শরীরে প্রবেশের প্রায় 10 থেকে 15 দিনের মধ্যে এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে পারে। টাইফয়েড এর লক্ষণ গুলো প্রকাশের এক সপ্তাহর মধ্যে সমস্যাগুলো বৃদ্ধি পেতে পারে।
টাইফয়েড জীবাণু আক্রমণ করলে এর প্রধান লক্ষণ হিসেবে জ্বর দেখা দেয়। রোগীর ভাষ্য মতে জ্বর কখনো আসে কখনো কমে যায়। তবে জ্বর সম্পূর্ণ ছেড়ে যায় না।
টাইফয়েড এর লক্ষণ গুলো হল-
- প্রচন্ড জ্বর। কখনো কখনো জ্বর ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে।
- মাথা ব্যথা
- শরীর ব্যথা
- দুর্বলতা
- ডায়রিয়া
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- বমি অথবা বমি বমি ভাব
- কাশি
- শরীরে দানা দানা দাগ দেখা দেয়া
- হৃদস্পন্দন কমে যাওয়া
টাইফয়েড টেস্ট রিপোর্ট
উপরের লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এক্ষেত্রে জ্বর ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হলে ঘরে বসে থাকা উচিত নয়। রোগীকে মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না হলে টেলিমেডিসিন স্বাস্থ্যসেবার পরামর্শ নিতে হবে। টেলিমেডিসিন সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন। দ্রুততম সময়ে চিকিৎসা না নিলে মৃত্যু ঝুঁকি থাকতে পারে।
টাইফয়েড শনাক্তের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন। এর মাধ্যমেও আমরা আমরা অবগত হতে পারি যে টাইফয়েড কেন হয়। রক্ত পরীক্ষার জন্য ব্লাড কালচার নামক পরীক্ষা করতে হয়। রক্তের নমুনায় সালমোনিলা টাইফি ও প্যারাটাইফি নামক ব্যাকটেরিয়া উপস্থিত পাওয়া গেলে টাইফয়েড হয়েছে বলে বোঝা যায়। এছাড়াও আমাদের দেশে উইডাল টেস্ট নামক ব্লাড টেস্ট করা হয়।
টাইফয়েড টেস্ট খরচ কত ?
টাইফয়েড টেস্ট সাধারনত দুই ধরনের হয়ে থাকে-
- ব্লাড কালচার
- উইডাল টেস্ট
হাসপাতাল ভেদে ব্লাড কালচারের জন্য ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা খরচ হতে পারে। অপরদিকে উইডাল টেস্টের জন্য ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা খরচ হতে পারে। টেস্টের এর মাধ্যমে টাইফয়েড কেন হয় বা হয়েছে তা জানতে পারি।
টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসা
ডাক্তারগন সাধারণত এন্টিবায়োটিক এর মাধ্যমে টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসা করে থাকেন। এন্টিবায়োটিকের ডোজ ৩ দিন ৭ দিন অথবা ১২ দিন হয়ে থাকে। রোগীর অবস্থা দেখে ডাক্তার ১৫ দিন অথবা তারও বেশি এন্টিবায়োটিক চালিয়ে যেতে বলেন। অ্যান্টিবায়োটিক শুরুর পাঁচ দিনের মধ্যে জ্বর কমতে থাকে।
অনেকে জ্বর হওয়ার পরও দ্রুত চিকিৎসা শুরু করে না এতে করে বিভিন্ন জটিলতায় পড়তে পারে। এন্টিবায়োটিক এর পাশাপাশি রোগীকে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খেতে হবে। কারণ এই সময় রোগীর খাবারের প্রতি রুচি থাকে না এবং ডায়রিয়ার কারণে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়।
পানি শূন্যতার পরিমাণ বেশি হলে রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে। রোগী মুখ দিয়ে খাবার গ্রহণ করতে না পারলে শিরা পথে স্যালাইন দেয়া যেতে পারে। টাইফয়েড রোগের চিকিৎসা এর পাশাপাশি রোগীকে প্রচুর বিশ্রাম নিতে হবে। জ্বরের মাত্র ঠিক রাখার জন্য ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে।
ভালো প্রোটিন আছে এমন খাদ্য বেশি বেশি খেতে হবে। আর অবশ্যই এন্টিবায়োটিকের কোর্সটি পূরণ করতে হবে অন্যথায় টাইফয়েড ব্যাকটেরিয়া টি নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিকের রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে ফেলবে যার ফলে ওই এন্টিবায়োটিক টি আপনার শরীরে আর কাজ করবে না।
কমেন্ট করুন
comment url