নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম


পরিবারে নতুন অতিথির আগমন মানেই উৎসব ও আয়োজন। আর সেই অতিথি যদি হয় নবজাতক সন্তান তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু বেশিরভাগ বাবা-মা ই জানেন না যে তার ছোট্ট শিশুটির কিভাবে যত্ন নিবে। এমনকি নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম বা পদ্ধতি ও ঠিকভাবে জানেন না অনেকে।
 
নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম


ভূমিকা

শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ সাধনের জন্য মায়ের বুকের দুধের বিকল্প নেই। শিশুকে নিয়মিত বুকের দুধ না খাওয়ালে মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। শিশুর সঠিকভাবে বেড়ে উঠার জন্য এই বিষয় টি ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে। অনেক সময় মায়ের বুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ থাকে না যার ফলে নবজাতক পর্যন্ত পরিমাণ দুধ পায় না পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ পাচ্ছে কিনা সেটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। এর সাথে সাথে দুধ খাওয়ানোর নিয়ম জেনে রাখতে হবে। অনেক মা-ই নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম জানেন না। আজকে আমরা নবজাতকের জন্য বুকের দুধের গুরুত্ব এবং নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব।

ব্রেস্ট ফিডিং বা স্তন্যপান বা দুগ্ধ পান

নবজাতকের মৌলিক বা প্রধান খাবার হচ্ছে মায়ের দুধ। মায়ের দুধ সর্বোত্তম দুধ। শিশুকে পরিপূর্ণ খাবার ও যত্নশীল পরিবেশ প্রদানের কার্যকর উপায় হচ্ছে স্তন্যদান। মায়ের দুধ হচ্ছে ছয় মাস পর্যন্ত বাচ্চার জন্য আদর্শ খাবার। চার থেকে পাঁচ মাস পর্যন্ত বাচ্চা/শিশুর জন্য অন্য কোন খাবার প্রয়োজন হয় না। ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে মায়ের দুধ ছাড়া ফোঁটা পানিও দেয়া হয় না এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং বা একচেটিয়া স্তন্যপান। কিন্তু এই সময় প্রয়োজনে শিশুকে ঔষধ বা ভিটামিন ড্রপস দেয়া যেতে পারে। শিশুর মায়ের বুকের দুধ পান করাকেই ব্রেস্ট ফিডিং বলা হয়। ব্রেস্ট ফিডিং এর মাধ্যমে শিশু ছয় মাস পর্যন্ত তার খাদ্য চাহিদা পূরণ করে থাকে।

শিশুর জন্য আদর্শ খাবার

শিশুর জন্য আদর্শ খাবার হল দুধ। দুধকে শিশুর আদর্শ খাবার বলা হয় কারণ দুধ সহজে পচনশীল, দুধ উচ্চ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ, দুধে প্রতিরক্ষামূলক উপাদান যেমন igA,ig M,ম্যাক্রোফেজ, লাইসোজাইম রয়েছে। দুধ সহজলভ্য ও সহজে তৈরি করা যায়।

মায়ের শাল দুধে কি কি উপাদান থাকে?

প্রসব পরবর্তী ৭২ ঘন্টা স্বল্প পরিমাণে হলুুধাব পুরু যে তরল নিঃসরণ হয় সেটাকে কলোস্ট্রাম বা শাল দুধ বলে। অন্যান্য সময়ের দুধের চেয়ে শাল দুধ বেশি পুষ্টিকর। মায়ের সাল দুধে বেশি পরিমাণে এন্টিবডি থাকে যা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় সরাসরি কাজ করে। তাছাড়াও সাল দুধে বেশি পরিমাণে প্রোটিন সেল, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন কে থাকে। শাল দুধে তুলনামূলক কম ল্যাকটোজ থাকে, এতে করে শিশুর সহজে দুধ হজম করতে পারে। মাই দুধের তুলনায় মায়ের শাল দুধে সোডিয়াম, ক্লোরাইড, ও ম্যাগনেসিয়াম বেশি থাকে এবং পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম কম পরিমাণে থাকে।

বুকের দুধ ও গরুর দুধের মধ্যে পুষ্টির পার্থক্য

পুষ্টি উপাদান মায়ের দুধ গরুর দুধ
আমিষ ১১ গ্রাম/লিটার ৩৩ গ্রাম/লিটার
শর্করা ৭০ গ্রাম/লিটার ৫০ গ্রাম/লিটার
ফ্যাট ৩৫ গ্রাম/লিটার ৩৫ গ্রাম/লিটার
মিনারেল ২ গ্রাম/লিটার ৮ গ্রাম/লিটার
ক্যালসিয়াম ০.৩৩ গ্রাম/লিটার ১ গ্রাম/লিটার
আয়রন ০.৪-১.৫ মিলিগ্রাম/লিটার ০.৩-০.৫ মিলিগ্রাম/লিটার
ভিটামিন সি ৬০ গ্রাম/লিটার ২০ গ্রাম/লিটার
ভিটামিন ডি ৫০ IU ২৫ IU
পানি ৮৮ গ্রাম/লিটার ৭ গ্রাম/লিটার
শক্তি ৬৪০-৭২০ কিলো ক্যালরি ৬৫০ কিলো ক্যালরি

বুকের দুধ খাওয়ানোর গুরুত্ব

  • মায়ের বুকের দুধে সকল পুষ্টি উপাদান সঠিক অনুপাতে থাকে যা শিশুর চার থেকে ছয় মাস বয়সে সবচেয়ে অনুকূল বৃদ্ধি ও বিকাশে প্রয়োজন।
  • এটি শিশুর বৃদ্ধি বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ বা প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখে।
  • মায়ের দুধে ভিটামিন, মিনারেল, ইলেকট্রোলাইট ও পানি প্রয়োজনীয় অনুপাতে থাকে যা শিশুর পূর্ণতা প্রাপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • দুধে ক্যালসিয়াম থাকায় এটি শিশুর হাড় গঠনে সহায়তা করে।
  • মায়ের দুধে প্রতিরক্ষামূলক পুষ্টি উপাদান থাকে যা শিশুকে এলার্জি, ব্রঙ্কিয়াল এজমা, ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে। শিশুর মৃত্যু ঝুঁকি কমায়। 

শিশুকে স্তন্যদানের উপকারিতা

  • আমরা মনে করি মায়ের দুধ পান করে শুধু শিশু উপকার লাভ করে। কিন্তু বুকের দুধ খাওয়ালে মায়ের অনেক উপকার হয়।
  • স্তন্যদান করলে মায়ের স্তন ক্যান্সার ও জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। মায়ের ওজন দ্রুত কমায়।
  • দুধ পান করালে প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণের ঝুঁকি কম থাকে। এটি প্রসবের পর জরায়ুর পুনরাবর্তনে সাহায্য করে।
  • স্তন্যদান কালে প্রোনেক্টিন হরমোন নিঃসরণ হয় যা মাতৃসুলভ আচরণ এর উন্নতি ঘটায়।

অন্যান্য উপকারিতা

  • অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় দুধ পান টাকা,সময় ও শক্তি বাঁচায়
  • দুধ পানের মাধ্যমে মা ও বাচ্চার পারস্পরিক বন্ধন বৃদ্ধি পায়

সন্তানকে কখন বুকের দুধ খাওয়ানো যাবে না

  • মায়ের কোন জটিল মানসিক রোগ থাকলে।
  • মায়ের ক্যান্সারের চিকিৎসা চলাকালীন।
  • মায়ের জ্বর,যক্ষা,নেফ্রাইটিস,হৃদরোগ,স্তন টিউমার,একলামশিয়া থাকলে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কমেন্ট করুন

comment url