রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয় জেনে নিন
আমরা প্রায়সই নানা রকম অসুখে ভুগে থাকি। এর মধ্যে কিছু রোগ সাধারণ আর কিছু রোগ
মারাত্মক হয়ে থাকে। অনেক সময় আমরা বারবার জ্বর, দুর্বলতা, অস্থিরতা, মাথাব্যথা
সহ বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হই। ঘন ঘন এমন রোগে আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ হতে পারে
আমাদের রক্তস্বল্পতা অথবা রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বল্পতা।
রক্তের প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো পরিমাণ মতো না থাকলে আমরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত
হয়ে থাকি। রক্তে হিমোগ্লোবিন কম হলেও এমন হয়। এমন হলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা কমে যায় যার ফলে বিভিন্ন জীবানু সহজে আমাদের আক্রমণ করতে পারে। রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয় জানতে সাথে থাকুন।
ভূমিকা
আয়রনসমৃদ্ধ এক ধরনের প্রোটিনের নাম হচ্ছে হিমোগ্লোবিন যা আমাদের রক্তের কোষের
থাকে। হিমোগ্লোবিন অক্সিজেন পরিবহনে সাহায্য করে থাকে। আমাদের শরীরের বিভিন্ন
অংশে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়া এর কাজ। রক্তে হিমোগ্লোবিন কম হলে নানান রকম সমস্যা
দেখা দিতে পারে। আজকে আমরা রক্তে হিমোগ্লোবিন কম হলে কি কি সমস্যা হয় এবং এর
প্রতিকার কি তা নিয়ে আলোচনা করব।
হিমোগ্লোবিন আসলে কি
পূর্বেই বলেছি হিমোগ্লোবিন হল আয়রনসমৃদ্ধ এক ধরনের প্রোটিন যা আমাদের রক্তকোষে
থাকে। এ প্রোটিন প্রধানত পুরো শরীরে অক্সিজেন ও নানা ধরনের পুষ্টি সরবরাহ করে
থাকে। আমাদের রক্ত কোষে তিন ধরনের রক্ত কণিকা থাকে লোহিত রক্ত কণিকা, শ্বেত
রক্তকণিকা ও অনুচক্রিকা।
আরো পড়ুনঃ টাইফয়েড জ্বর কতদিন থাকে?
এ তিনটি কণিকার মধ্যে লোহিত রক্ত কণিকায় এক বিশেষ ধরনের লৌহ পদার্থ থাকে যাকে
আমরা হিমোগ্লোবিন বলে থাকি। শরীরের সকল স্থানে অক্সিজেন সরবরাহ করা হিমোগ্লোবিন
এর কাজ।
রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা কত?
বিশেষজ্ঞদের মতে পুরুষের শরীরে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা হলো ১৩.৫ থেকে
১৭.৫ গ্রাম/ডেসিলিটার এবং নারীদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা ১২ থেকে
১৫.৫ গ্রাম/ডেসিলিটার।
যদি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে রক্ত
দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে ১১ বা তার থেকেও কম
হিমোগ্লোবিনের মাত্রা হলে ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ?
শরীরে বিভিন্ন ভিটামিনের ঘাটতি বিশেষ করে ভিটামিন বি ১২এর ঘাটতির কারণে রক্তে
হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দেয় অপরদিকে শরীরে আয়রনের অভাব হলেও হিমোগ্লোবিনের
মাত্রা কমে যায়। লিউকোমিয়া হলে শরীরের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যেতে পারে
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এর কারণে শরীরের রক্ত এবং হিমোগ্লোবিন দুটোই কমে যায় যেকোনো
ধরনের অসুখ অথবা গুরুতর রোগ বিশেষ করে ক্যান্সার, এইডস, লিভার সিরোসিস, পাইলস,
আলসার, টিউমার ইত্যাদির কারণে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যেতে পারে।
শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি কি লক্ষণ দেখা দেয়?
শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে নানা রকম লক্ষণ প্রকাশ পায় নিম্নে সেগুলো তুলে ধরা
হলো-
- শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে ত্বক ফ্যাকাসে হয়ে যায়। বিশেষ করে মুখ ঠোঁট,দাঁতের মাড়ি এবং চোখের পাতা সহ নখ ফেকাসে হয়ে যায়।
- হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো শরীরে আয়রনের ঘাটতি। শরীরে আয়রন কম থাকলে হৃদরোগের সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
- শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে রক্তের কোষগুলোতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। যার ফলে ত্বক শুষ্ক দেখায়,চুল পড়ে এবং নখ ভঙ্গুর হয়ে যায়।
- শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কোষগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ হয় না যার ফলে শরীরের বিভিন্ন পেশীতে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন পায় না। এর ফলে হাঁটতে ও যে কোন কাজ করতে ক্লান্তি লাগে।
হিমোগ্লোবিন কত পয়েন্ট হলে রক্ত দিতে হয়?
বিশেষজ্ঞদের মতে পুরুষের শরীরে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা হলো ১৩.৫ থেকে
১৭.৫ গ্রাম/ডেসিলিটার এবং নারীদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা ১২ থেকে
১৫.৫ গ্রাম/ডেসিলিটার।
যদি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে হিমোগ্লোবিন অতিরিক্ত পরিমাণে কমে যায় তবে রক্ত
দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে ১১ বা তার থেকেও কম
হিমোগ্লোবিনের মাত্রা হলে ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
100 মিলি রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা কত?
পুরুষের ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা হলো ১৩ থেকে ১৮ গ্রাম/১০০ মিলি
এবং নারীর ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা হলো ১৪ থেকে ১৬ গ্রাম/১০০
মিলি।
হিমোগ্লোবিন টেস্ট এর নাম কি?
MCH এর মাধ্যমে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নির্ণয় করা সম্ভব। সাধারণত এমসিএইচ পরীক্ষা
হলো একটি ডায়াগনস্টিক রক্ত পরীক্ষা যার মাধ্যমে MCH এর মাত্রা পরিমাপ করা হয়।
এর দ্বারা একজন মানুষের স্বাস্থ্যের অবস্থা মূল্যায়ন করা যায়। MCH পরীক্ষা
পিকো(pg) গ্রামে পরিমাপ করা হয়। MCH এর মাত্রা প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ২৬
থেকে ৩৩ পিকোগ্রাম হয়ে থাকে।
হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি কি খাওয়া উচিত?
রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হয় এর ফলে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি
পায়। হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে এমন খাবার গুলো হল মাছ, মাংস, লাল শাক, ডিম,
সামুদ্রিক ছোট মাছ, ছোলা, বিভিন্ন রকমের ডাল, সয়াবিন, সবুজ শাক, পালং শাক
ইত্যাদি। এছাড়াও নিয়মিত শরীর চর্চা করলে শরীরের রক্ত এবং হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ
বৃদ্ধি পায়।
লেখকের মন্তব্য
আজকে আমরা রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয় এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। যদি আপনাদের আরো কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তবে নিচে কমেন্ট অপশনে আপনাদের মন্তব্য জানিয়ে দিন। আশা করি এখন আপনারা বুঝতে পেরেছেন রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয় এবং এর প্রতিকার কি । যদি আপনি এই পোস্ট থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন তবে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
কমেন্ট করুন
comment url